বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ন
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি॥
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ (রাণীশংকৈল-পীারগঞ্জ) আসনে মহাজোট প্রার্থী আ’লীগের শরিক দল ওয়ার্কাস পার্টির জেলা সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ ইয়াসিন আলী বিদ্রোহের জ্বালায় ভরাডুবি হয়েছে। নৌকা প্রতিক থাকলেও আ’লীগের কেউ মনোনয়ন না পাওয়ায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে আ’লীগ।
যে কারণে মহাজোটের ভরাডুবি
(ক) কেন্দ্রিয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে আওয়ামী লীগের দূর্গ এ আসনে ক্ষোভে সাবেক সাংসদ ও পীরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটরগাড়ী (কার) প্রতিক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন। পীরগঞ্জ উপজেলায় আ’লীগ নেতাকর্মিরা প্রকাশ্যে সতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুলের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে থাকলেও রাণীশংকৈল উপজেলায় হয় দূ’ভাগে বিভক্ত। আ’লীগের একটি অংশ উল্লেখ্যযোগ্যদের মধ্যে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পৌর মেয়র আলমগীর সরকার জেলা সেচ্ছা সেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সহ-সম্পাদিকা ভাইস চেয়ারম্যান মাহফুজা বেগম পুতুল পৌর সম্পাদক মহাদেব বসাক ইউনিয়ন সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র নার্থ বর্ম্মন নেকমরদ ইউনিয়ন সভাপতি আবুল হোসেন বাচোর সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম জেলা পরিষদ সদস্য এখলাসুর রহমান লিটন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নওরোজ কাউসার কানন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরৎ চন্দ্র রায় দপ্তর সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর রফিউল ইসলাম সহ-প্রচার সম্পাদক রবিউল ইসলাম সদস্য মামুনুর রশিদ এলবাট সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরৎ চন্দ্র রায়।
(খ) এছাড়াও মহাজোটের বিপক্ষে পীরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ যুগ্ন সম্পাদক অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় দলীয় মনোনয়ন না চেয়েও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সিংহ প্রতিকে নিয়ে মাঠে ছিলেন কিন্তু ভোটের একদিন আগে সংবাদ সন্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আরেক সতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক কে সমর্থন করেন এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটাররা পড়ে বিভ্রান্তে। এদিকে কেন্দ্রিয় নির্বাচন পাল্লামেন্টারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে নৌকার প্রতিকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোন নেতা বিদ্রোহী অথবা সতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন না হলে বহিস্কার করা হবে। কিন্তু নির্বার্চন মূহুর্তে বহিস্কার না করায় এ আসনে মহাজোটের ভরাডুবি কারণ হিসাবে দেখছেন ভোট বিশ্লেষকরা।
(গ) এ আসনে মহাজোট প্রার্থী বর্তমান সাংসদ ওয়াকার্স পাটির জেলা সভাপতি অধ্যাপক ইয়াশিন আলী’র সাংগঠনিক অবস্থা দূর্বল থাকায় তেমন ভোট ব্যাংক নেই বললেই চলে। নির্বাচনে নির্ভর করতে হয় অন্য দলের ভোটের উপর এ কারণে বেশি ভরাডুবির কারণ বলে ভোট বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নৌকার প্রার্থী বা সমর্থকদের পীরগঞ্জ উপজেলায় প্রচারণা তেমন চালাতে দেননি সতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন তাদের কে পথে পথে বাঁধার সৃষ্ঠি করেছে। এ নিয়ে পীরগঞ্জ থানায় অভিযোগও করেছে নৌকার সমর্থকরা। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ উন্মুক্ত আসন হিসাবে এ আসনে নির্বাচন করেছেন।
এ ব্যাপারে ভোট বিশ্লেষকরা মনে করছেন জাতীয় পাটির ভোটটি এ আসনে আওয়ামী এন্টি জাপার প্রার্থী না থাকলে এ ভোটটি ধরে রাখার মতো কারো ক্ষমতা নেই। জাপা প্রার্থী থাকায় মহাজোটের ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি। নির্বাচন চলাকালিন সময়ে মহাজোট প্রার্থীর সাথে বেশি ভাগ সংঘর্ষ হয়েছে সতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই নির্বাচনী মাঠে বিএনপি প্রার্থী জাহিদুর রহমান প্রচারণা চালিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এ আসনে বিএনপি প্রার্থী জাহিদুর রহমান (ধানের শীষ) ৮৮,৫,১০ ভোট পেয়ে বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক (মটর গাড়ী) পায় ৮৪৩৯৫ ভোট। মহাজোট প্রার্থী অধ্যাপক ইয়াশিন আলী পায় ৩৮,০৬২ ভোট, জাতীয় পাটির প্রার্থী হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ (লাঙ্গল) ২৭,১৮২ ভোট। এছাড়াও এ আসনে ছোট ছোট কয়েকটি দল আম, হাতপাখা ও কাস্তে মার্কা প্রতিক নিয়ে মাঠে রয়েছেন।